(প্রযুক্তি প্রতিদিন) হ্যাকারদের হাত থেকে কম্পিউটার রক্ষায় ম্যাজিক রিং, আইস্ক্যান এর মত কোন প্রযুক্তিই খুব একটা কার্যকর নয়। কারণ প্রচলিত প্রযুক্তি দিয়েই কোনো না কোনোভাবে এ ধরনের নিরাপত্তাব্যবস্থা পাশ কাটিয়ে হ্যাকিং করতে পারে হ্যাকাররা। সম্প্রতি ইউসি বার্কলে স্কুল অব ইনফরমেশনের অধ্যাপক জন চুয়াং ও তার গবেষক দল উদ্ভাবন করেছে চিন্তানির্ভর নিরাপত্তাব্যবস্থা।
প্রচলিত পাসওয়ার্ড হাতিয়ে নেয়া সম্ভব হলেও চিন্তানির্ভর নতুন পদ্ধতি হ্যাক হওয়ার ঝুঁকি অদূর ভবিষ্যতে নেই। চুয়াং ও তার দল মানুষের চিন্তাধারাকে ধরার জন্য উদ্ভাবন করেছেন বিশেষ একটি যন্ত্র। এটি মস্তিষ্ক তরঙ্গের তারতম্য ধরতে পারে। ইলেকট্রোএনসেফেলোগ্রাম (্ইইজি) নির্ভর এ যন্ত্রটি মস্তিষ্কের বিশেষ একটি কার্যক্রমকে সুনির্দিষ্ট করে সেটাকে লিখিত পাসওয়ার্ডের মতো করে ব্যবহার করতে পারে। পাসথট নামক এই যন্ত্রটি তৈরি করা হয়েছে ১০০ ডলার মূল্যের নিউরোস্কাই মাইন্ডসেট হেডসেটের ওপর ভিত্তি করে। ব্লুটুথ প্রযুক্তির মাধ্যমে এ হেডসেটটি ব্যক্তিকে কম্পিউটারের সাথে যুক্ত করে। এ হেডসেট পরিহিত অবস্থায় স্বেচ্ছাসেবকেরা সাতটি মানসিক পরীক্ষায় অংশ নেন। সে সময় বিজ্ঞানীরা তাদের মস্তিষ্ক তরঙ্গ পরিমাপ করেন। প্রথমে প্রত্যেক স্বেচ্ছাসেবককে একই ধরনের তিনটি কাজ করতে দেয়া হয়। এর মধ্যে রয়েছে শ্বাস নেয়ার দিকে মনোযোগ দেয়া, কল্পনায় আঙুল ওঠানামা করা এবং একটি শব্দ সঙ্কেত শুনে এক টুকরা কাগজের ওপরে একটি বিন্দুতে মনোযোগ দেয়া। এ কাজগুলো করার সময় স্বেচ্ছাসেবকদের মস্তিষ্ক তরঙ্গ যেভাবে ওঠানামা করেছে, তা রেকর্ড করেন গবেষকেরা। এরপর সেটিকেই স্বেচ্ছাসেবকদের মস্তিষ্ক তরঙ্গের ভিত্তি হিসেবে নির্ধারণ করা হয়। চুয়াং জানিয়েছেন, চিন্তাধারার মাধ্যমে নিখুঁতভাবে কোনো ব্যক্তিকে সহজেই চিহ্নিত করা সম্ভব। ব্যক্তিগত চিন্তার সময় হওয়া মস্তিষ্ক তরঙ্গ পরিমাপকে ভিত্তি পরিমাপের সাথে সমন্বয় করে গবেষকেরা পেয়ে যান প্রত্যেক স্বেচ্ছাসেবকের আলাদা আলাদা ইইজি লক্ষণ। যেগুলোকেই পাসথট হিসেবে নির্ধারণ করা হয়। গবেষকেরা জানিয়েছেন, এগুলোর প্রতিটিই ছিল আলাদা এবং কম্পিউটারও সেগুলো ধরতে পেরেছে। এমনকি একই ধরনের কাজ করার সময় প্রত্যেক স্বেচ্ছাসেবকের মস্তিষ্ক তরঙ্গ আলাদা ছিল। গবেষকদের দাবি, প্রত্যেকের মস্তিষ্ক তরঙ্গ আলাদা হওয়ায় হ্যাকারদের পক্ষে কারো পাসথট চুরি করা প্রায় অসম্ভব হয়ে দাঁড়াবে। হডসেটের মাধ্যমে প্রাপ্ত তথ্যকে পরিমার্জন করে ভুলের মাত্রা ১ শতাংশের নিচে নামিয়ে আনেন গবেষকরা। ইইজি সেন্সর ব্যবহার করেও মস্তিষ্কের যে তরঙ্গ পাচ্ছেন তা দিয়ে খুব সহজেই সুরক্ষিত নিরাপত্তাব্যবস্থা গড়ে তোলা সম্ভব হবে।