(প্রযুক্তি প্রতিদিন) বাংলাদেশ ওপেন সোর্স নেটওয়ার্ক (বিডিওএসএন) এর সাধারণ সম্পাদক হিসাবে মুনির হাসান আসন্ন বাজেট নিয়ে প্রযুক্তি প্রতিদিন কে জানিয়েছেন তিনি কেমন বাজেট আশা করছেন।
যেহেতু এখনো আমাদের দেশে ফাউন্ডেশনের অনেক কাজ বাকী। এজন্য আমাদের আবকাঠামো গত উন্নয়ন প্রয়োজন। ব্রডব্যান্ডের কথা যদি আমরা ধরি তাহলে ঢাকাকে বাদ দিলে বাংলাদেশ অনেক পিছনে রয়েছে। নানান কারণে গ্রামে ব্রডব্যান্ডের বিকাশ হচ্ছে না। এজন্য এবারের বাজেটে ব্রডব্যান্ডের জন্য আলাদা কিছু করা হোক। এই ব্যাপারে মুনির হাসানের প্রস্তাবনা:
এবারের বাজেটে ব্রডব্যান্ড সম্প্রসারণের জন্য মাত্র ১০০ কোটি টাকা বরাদ্দ দেওয় হোক। এর থেকে মাত্র ৩০ কোটি টাকা খরচ করে দেশের কমপক্ষে ২০০টি স্থানে ৫ মেগাবিটের উন্মুক্ত ওয়াই-ফাই জোন তৈরি করা যাবে। এগুলোতে মাত্র এক থেকে দুই বছরের ব্যান্ডউইডথের খরচ সরকার দেবে।
বিনামূল্যের ওয়াই-ফাই জোনগুলো যে ব্যবহারকারীদের তৈরি করবে তাতে পরবর্তী সময়ে ব্রডব্যান্ড অপারেটররা সেখানে হাজির হবেন। যেহেতু বিশ্বব্যাংকের সহায়তায় বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে ব্রডব্যান্ড সংযোগের কাজ চলছে কাজে বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর জন্য আলাদা করে কোন উদ্যোগ না নিলেও চলবে।
দেশের বড় বড় কলেজগুলোতে ব্রডব্যান্ড সংযোগের জন্য আর ২০ কোটি টাকা খরচ করা যেতে পারে। এই টাকাতে ঢাকা, তিতুমির, চট্টগ্রাম, ইডেন, সারদা সুন্দরী, বজ্রমোহন, আনন্দমোহন কলেজের মতো কলেজগুলোতে উচ্চগতির ইন্টারনেট সংযোগ দেওয় যাবে। আর ৩০ কোটি টাকা বিটিসিএলকে দিয়ে এখনও যে শহরগুলোতে উচ্চগতির ইন্টারনেট সংযোগ দেওয়া কঠিন সেখানে সে অবকাঠামো গড়ে তুলতে হবে। সঠিক নেতৃত্ব ও যথার্থ প্রতিষ্ঠানের মাধ্যমে এই কাজ কয়েক মাস সময়ের মধ্যে সম্পন্ন করা সম্ভব।
গ্রামীণ জনগণের একমাত্র ইন্টারনেট সেবা দানকারী মোবাইলফোন সেবাদাতা প্রতিষ্ঠানগুলোর ইন্টারনেট সেবার মূল্য অনেক। ২০০৭ সালে এক মেগাবিট ইন্টারনেট ব্যান্ডউইডথ-এর দাম ছিল ৩৮ হাজার টাকা। সেই সময় মোবাইল ফোনের একটি জনপ্রিয় ইন্টারনেট সেবার মাসিক খরচ ছিল ভ্যাটসহ ৩৪৫ টাকা। বর্তমান সরকার ক্ষমতায় আসার পর এই সময়েও ইন্টারনেট ব্যান্ডউইডথের দাম অনেক কমে মেগাবিট প্রতি সর্বোচ্চ ৮০০০ টাকা হয়েছে। কিন্তু সেই প্যাকেজের দাম এখনো ৩৪৫ টাকায় রয়ে গেছে। এ ব্যাপারে রেগুলেটরের তেমন কোন ভূমিকা দেখা যায় না। বাজেটে তাই এ ধরণের নির্দেশনা থাকা দরকার।
ইন্টারনেট সেবার মূল্য বেশি হওয়ার আর একটি কারণ হল ১৫% ভ্যাট বা মূল্য সংযোজন কর। আমরা দেখেছি বিভিন্ন আইএসপি তাদের ব্যবহারকারীদের শেয়ারড একসেস দিয়ে থাকে। অর্থাৎ কোন কোন সময় ১ মেগাবিট ইন্টারনেট সেবা ৪জন ব্যবহার করে থাকে। কিন্তু এই চারজনকেই ১৫% হারে ভ্যাট দিতে হয় যদিও আইএসপি তার আপস্ট্রিমে ১ মেগাবিটের দাম দিচ্ছে। এক্ষেত্রে ভ্যাটের হার কমিযে ৪.৫% করা হলে
বাজেটে আগামী দিনগুলোতে একটি বড় লক্ষ্য হওয়া উচিত উৎপাদনশীলতা বাড়ানো। আর এই জন্য দরকার কানেকটিভিটি। ঢাকার বাইরের গ্রামগুলোতে দ্রুতগতির ইন্টারনেট নিতে হলে দরকার থ্রি জি সেবা। এই নিয়ে যে পরিমান কথা আর আশাবাদ ব্যক্ত হয়েছে তাতে একটি মহাকাব্য লেখা যায়। কিন্তু আমাদের দরকার কাজ। আশাকরি বাজেটে এই ব্যাপারে একটি নির্দেশনা থাকবে।
বর্তমানে টেলিকম অপারেটররা প্রতিদিনই ইউনিভার্সাল অবলিগেটরি ফান্ডে প্রায় এক কোটি টাকা জমা দিচ্ছে। এই টাকাটা সরাসরি ইন্টারনেট ও তথ্যপ্রযুক্তি খাতে লাগানো যেতে পারে। পর্তুগালের মত দেশও তাদের ল্যাপটপ কারখানা গড়ে তুলেছে থ্রিজি লাইসেন্সের টাকা দিয়ে। আমরাও ওদেরমত কিছু করতে পারি।
বিশ্বব্যাংকের হিসাব অনুসারে আগামী ১০ বছরে কেবল চিনে সাড়ে আট কোটি চাকরি উদ্বৃত্ত হয়ে যাবে যা ছড়িয়ে পড়বে আশেপাশের দেশে। বিশ্বব্যাংকের ধারণা তার মধ্যে দেড় কোটি আমরা আমাদের দেশে নিয়ে আসতে পারবো। আর এই কাজগুলোর একটি বড় অংশই থাকবে তথ্যপ্রযুক্তিকে কেন্দ্র করে। বাজেট এব্যাপারে দিক-নির্দেশনা থাকা উচিত।
২০০৯ সাল থেকে আইসিটি খাতে একটি ১০০ কোটি টাকার থোক বরাদ্দ দেওয়া হয়। সেই টাকা দিয়েই তৈরি হয়েছে জাতীয় ডেটা সেন্টার, তিন হাজারের বেশি বিদ্যালয়ে কম্পিউটার ল্যাব, সোলারচালিত ইউনিয়ন তথ্য কেন্দ্র, ডিজিটাল স্বাক্ষর ব্যবস্থা। কিন্তু আইসিটি পৃথক মন্ত্রণালয় হওয়ার পর এই বরাদ্দ গত বছর ৫০ কোটি টাকাতে নেমে এসেছে। এটি আবার ১০০ কোটি টাকা করা হোক। সেই সঙ্গে নতুন মন্ত্রণালয়ের সক্ষমতা বাড়ানোর উদ্যোগও থাকুক বাজেটে।
আইসিটি শিল্পের কর অবকাশ এই বছর শেষ হবে। এটি আরো ৫ বছরের জন্য বাড়ানো হোক।