শৈশব থেকেই প্রযুক্তির প্রতি আলাদা রকমের ঝোঁক ছিল ফ্রিল্যান্সার মারজান আহমেদের। আউটসোর্সিংয়ের সাথে অনেক আগে থেকে পরিচিত তিনি। ২০১০ সালের এপ্রিল মাস থেকে পেশা হিসেবে এ জগৎটিকে বেছে নিয়েছেন। শখের বসেই ফ্রিল্যান্সিং শুরু করেছিলেন। শুরুর দু-তিন মাসের মধ্যে ভালো সম্ভাবনা দেখতে পেয়ে বেশ উৎসাহ নিয়ে পুরোদমে কাজে নেমে পড়েন মারজান। কনটেন্ট লেখা ও ওয়েব ডিজাইনের কাজ দিয়ে শুরু করেন ফ্রিল্যান্সিং।
বর্তমানে অনলাইন মার্কেটিংয়ের নিজেকে দক্ষ করে ফ্রিল্যান্সার ডট কমে কাজ করছেন। মারজান জানিয়েছেন, ডাটা এন্ট্রি দিয়ে শুরু করে ওয়েব ডিজাইন, ছোট ছোট লোগো ডিজাইন এর কাজ করেছি। আর আমি যেহেতু ইংরেজির ছাত্রী তাই লেখালেখির কাজও করছি। আসলে যখন যেটা ভালো লাগে তখন সেটাই করি। বর্তমান ইন্টারনেট বিপণনের প্রতি আমার আগ্রহ বেশি। তিনি আরো বলেন, আমি সব সময় বায়ারের কাছ থেকে ভালো র্যাংকিং পাওয়ার চেষ্টা করি। ডেডলাইন মেনে চলায় এখন পর্যন্ত কোনো সমস্যায় পড়তে হয়নি।
আমি মনে করি, বাংলাদেশে নারীদের স্বনির্ভরতার জন্য ফ্রিল্যান্সিং একটা উন্মুক্ত সেক্টর। নিজের মেধা, মনন আর সৃজনশীলতা কাজে লাগিয়ে যে কেউ এ জগতে আসতে পারে। তবে শুরুতেই নতুনদের উদ্দেশে একটা কথা বলব তাহলো ফ্রিল্যান্স মার্কেট প্লেসে অনেক রকমের কাজ রয়েছে। নিজেকে ঠিক করতে হবে কোন ফিল্ডে কাজ করবেন। ভালো একটি বিষয় পচ্ছন্দ করে নিজেকে দক্ষ করতে পারলে এখানে কাজের কোনো অভাব হবে না। আর আপনার কাজের সোর্সের ব্যাপারেও অত্যন্ত সতর্ক হতে হবে। যেহেতু এটা ইন্টারন্যাশনালি তাই ইংরেজি ভাষা ভালোভাবে আয়ত্ত করা উচিত। প্রথম দিকে কাজ পেতে একটু দেরি হলে নতুনরা উৎসাহ হারিয়ে ফেলে এটা ঠিক নয়। মনে রাখা দরকার এ কাজে ধৈর্য আর দক্ষতাই আপনার মূল পুঁজি। এ দুটোকেই সামনে নিয়ে চলতে হবে। অপেক্ষা করুন দেখবেন ঠিক কাজ পেয়ে গেছেন।
মারজান জানিয়েছেন, ‘ফ্রিল্যান্সিং যখন শুরু করেছিলাম তখন আমার নিজের প্রতি আস্থা ছিল। সংসার সামলে পড়াশোনার পাশাপাশি যতটা সময় দেয়া যায়, ততটাই কাজে লাগানোর চেষ্টা করেছি।
ফ্রিলান্সিং নিয়ে বাংলাদেশের সম্ভাবনা জানতে চাইলে মারজান আহমেদ বলেন, ‘ফ্রিল্যান্সিংয়ে বাংলাদেশে অনেক ভালো সম্ভাবনা রয়েছে। আশা করা যায়, খুব অল্প সময়ের মধ্যে বাংলাদেশ তথ্য প্রযুক্তিতিতে বিশ্বের মধ্যে একটি ভালো অবস্থানে যাবে।
ফ্রিলান্সিং নিয়ে নতুনদের কিভাবে অগ্রসর হওয়া উচিত সে প্রসঙ্গে মারজান বলেন, ফ্রিল্যান্সিং শুরু করার আগে সব ধরনের কাজ একটু পরখ করে নিয়ে সে অনুযায়ী নিজেকে তৈরি করে নিন। আউটসোর্সিংয়ের কাজ করতে ইংরেজিতে পারদর্শী হতেই হবে। অন্তত প্রজেক্টের চাহিদা বোঝা এবং সে অনুযায়ী বায়ারের সাথে সাবলীলভাবে যোগাযোগ করার মতা থাকা প্রয়োজন। একটি প্রজেক্ট সম্পর্কে পূর্ণাঙ্গ ধারণা নিয়ে কাজ শুরু করুন। ডেডলাইন সময় শেষ হওয়ার আগেই সম্পূর্ণ কাজ সম্পন্ন করে ক্লায়েন্টের কাছে পাঠিয়ে দিতে হবে। ক্লায়েন্টের কাছে কাজ পাঠানোর আগে ভালো করে রিকোয়ারমেন্ট আরেকবার দেখে নিয়ে সম্পূর্ণ কাজ ভালো করে পরখ করে নিন। সব সময় চেষ্টা করবেন, কাজ শেষে সর্বোচ্চ রেটিং পাওয়ার। ভালো রেটিং পেলে পরবর্তী কাজগুলো খুব সহজেই পাওয়া যায়। ভালো রেটিং পাওয়ার উপায় হচ্ছে সঠিকভাবে কাজটি করা, সময়মতো কাজটি শেষ করা, ক্লায়েন্টের সাথে নিয়মিত যোগাযোগ রাখা।
তবে ফ্রিল্যান্সিয়ের প্রতিবন্ধকতা রয়েছে অনেক। এর মধ্যে পেপল ব্যবস্থা চালু করা, ইন্টারনেট গতির মত বিষয়গুলো আমাদের সম্ভাবনাকে বাধাগ্রস্থ করছে। এ বিষয়ে সরকারের তথ্যপ্রযুক্তি বিভাগের নজর দেয়া উচত। ফ্রিল্যান্সার ডট কমে বর্তমানে আমার অবস্থান নবম স্থানে। ভবিষ্যতে আরো ভালো কিছু করার ইচ্ছা আছে এ সেক্টরে। নতুনদের নিয়ে আগাতে চাই। ফ্রিল্যান্সিংয়ে বাংলাদেশের অবস্থান প্রথমে দেখতে চাই।
সাক্ষাৎকার নিয়েছেন:আহমেদ ইফতেখার