(প্রযুক্তি প্রতিদিন) দেশে অবৈধ ভিওআইপি ব্যবসা বন্ধের অযুহাতে ইন্টারনেট আপলোড গতি ৭৫ শতাংশ কমানোর নির্দেশনা দিয়েছে বাংলাদেশ টেলিযোগাযোগ নিয়ন্ত্রণ কমিশন (বিটিআরসি)। ইন্টারনেট সেবাদাতা প্রতিষ্ঠানগুলোর (আইএসপি) আপলোড স্পিড সর্বোচ্চ ২৫ শতাংশ রাখার নির্দেশনা দিয়েছে বাংলাদেশ টেলিযোগাযোগ নিয়ন্ত্রণ কমিশন (বিটিআরসি)। বিটিআরসি ইঞ্জিনিয়ারিং অ্যান্ড অপারেশনস বিভাগ থেকে পাঠানো ওই নির্দেশনায় আইআইজি প্রতিষ্ঠানগুলোকে জানানো হয়, ইন্টারনেট সেবাদাতা প্রতিষ্ঠানগুলোর (আইএসপি) আপলোড স্পিড সর্বোচ্চ ২৫ শতাংশ হলেও
ব্যাংক, আর্থিক প্রতিষ্ঠান, সফটওয়্যর প্রতিষ্ঠান, ট্রাভেল এজেন্ট, দূতাবাস ও সরকারি প্রতিষ্ঠান এর আওতা মুক্ত থাকছে। এসব প্রতিষ্ঠানের নাম ৭ দিনের মধ্যে বিটিআরসিকে দেওয়ার নির্দেশনাও দেওয়া হয়েছে। বৃহস্পতিবার বিটিআরসি ইন্টারন্যাশনাল ইন্টারনেট গেটওয়েগুলোকে (আইআইজি) এ নির্দেশনা দেওয়ার পর থেকেই ইন্টারনেট আপলোড স্পিড কমে গেছে। ফলে ইন্টারনেট ভিত্তিক ব্যবসা প্রতিষ্ঠান ও ফ্রিল্যান্সাররাসহ অনেকেই বিপাকে পড়েছেন। এদিকে আপলোড গতি বৃদ্ধি করার জন্য ফোনে শত শত অনুরোধ আসছে বিটিআরসি, আইআইজি, আইএসপি ও পত্রিকা অফিসগুলোতে।
দেশের ইন্টারনেট সেবাদাতা প্রতিষ্ঠানগুলো জানিয়েছে, বৃহস্পতিবার থেকে এ নির্দেশনা কার্যকর হওয়ার পর গ্রাহকরা আপলোড স্পিড কম পাচ্ছেন।
এদিকে এ নির্দেশনার ফলে ইন্টারনেট সেবাদাতা প্রতিষ্ঠানগুলো আপলোড গতি ৭৫ শতাংশ কমিয়ে এনেছে। ফলে ফেসবুকে ছবি আপলোড, স্কাইপিসহ অন্যান্য ভিডিও চ্যাটে ভোগান্তি পোহাতে হচ্ছে সাধারণ ব্যবহারকারীদেরও।
মজার ব্যাপার হলো এ নির্দেশনার ফলে ইন্টারনেট ডাউনলোড গতিতে কোন প্রভাব পড়ছে না। ইন্টারনেট গ্রাহকদের আপলোড স্পিড কমিয়ে সর্বোচ্চ ২৫ শতাংশ করায় বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছেন ফ্রিল্যান্সাররা। দেশের অনেক ফ্রিল্যান্সার ভিডিও এডিটিং, থ্রিডি মডেলিংসহ অনেক বড় মাপের ফাইল আপলোডসহ নানা কাজ করেন। সাধারণত এডিট করা একটি ভিডিও এর সাইজ ১ গিগা বা তার চেয়েও অনেক বেশি হয়।
আগে যেখানে একজন ফ্রিল্যান্সার ১ এমবিপিএস এর ইন্টারনেট ব্যবহার করে ডাউনলোড স্পিড পেয়েছেন ১০০- ১২০ কেবিপিএস এবং আপলোড স্পিড থাকতো ২০-৩০ কেবিপিএস। এখন সেটা কমিয়ে ২৫ শতাংশ করায় আপলোড স্পিড পাবে ৫-৭ কেবিপিএস। এতে একদিকে যেমন সময় নষ্ট হবে অন্য দিকে কাজ করার আগ্রহ হারাবে ফ্রিল্যান্সাররা।
গতবছরও প্রায় ৩০০ কোটি টাকার বৈদেশিক মুদ্রা এনেছে ফ্রিল্যান্সাররা। বর্তমানে দেশে কয়েক লাখ ফ্রিল্যান্সার কাজ করছেন, যাদের প্রতিদিন গড়ে ইনকাম করছেন এক কোটি টাকার ওপরে। কিন্তু ইন্টারনেট আপলোড গতি কমিয়ে দেওয়াতে তারা হতাশা প্রকাশ করেছেন।
পূর্ণ গতির ইন্টারনেট, ডাটার সঠিক দাম নির্ধারণ ও পেপাল চালুসহ ৭ দফা দাবিতে পিসিহেল্পলাইনবিডি ব্লগের উদ্যাগে আগামী ৩১ মে “আমাদের দাবি পূরণ করো, আমরাই ডিজিটাল বাংলাদেশ গড়বো” স্লোগান নিয়ে মানববন্ধন করবেন ফ্রিল্যান্সাররা।
এতে প্রায় ১০ হাজার ফ্রিল্যান্সার এতে অংশ নেবেন বলে জানিয়েছেন আয়োজকরা। তাদের মতে, অত্যন্ত দুঃখের বিষয়- দফায় দফায় ইন্টারনেটের ডাটার দাম কমলেও গ্রাহক পর্যায়ে কোন প্রভাব পড়ে নি। রক্তচোষা ইন্টারনেট সেবাদানকারী প্রতিষ্ঠানগুলো একদিকে যেমন গলাকাটা মূল্য নিচ্ছে, অপরদিকে ইন্টারনেটের ধীরগতির জন্য বায়ার হারাতে হচ্ছে। তাই মানববন্ধনের মাধ্যমে শান্তিপূর্ণভাবে সরকারের কাছে সমস্যাগুলো তুলে ধরা হবে।
এসব দাবির মধ্যে রয়েছে ১ গিগাবাইট (জিবি) ডাটার দাম ৫০ টাকা ও ৫ জিবির দাম ২০০ টাকা নির্ধারণ, ফ্রিল্যান্সার ও ইকমার্সের স্বার্থে বাংলাদেশে দ্রুত পেপাল চালুর ব্যাপারে সরকারি জরুরি উদ্যোগ গ্রহণ, ইন্টারনেটের ফেয়ার ইউজ পলিসি সম্পূর্ণ নিষিদ্ধ করে ইন্টারনেটের নূন্যতম গতি নির্ধারণ করে পূর্ণ গতির ডাটার ব্যবস্থা, ইন্টারনেট সেবাদানকারী মোবাইল প্রতিষ্ঠান গুলোর স্বেচ্ছাচারিতা রোধে একটি বিশেষ সেল গঠন, ডাটার মেয়াদ শেষ হয়ে গেলেও অব্যবহিত ডাটা পরের বার ডাটা প্যাকেজ চালু করার সঙ্গে সঙ্গে যোগ করার পদ্ধতি সহ ব্যাংক কর্মকর্তাদের তত্ত্বাবধানে ফ্রিল্যান্সারদের সব হয়রানি বন্ধ করা।