লাইব্রেরিতে আধুনিক প্রযুক্তির ছোয়া

(প্রযুক্তি প্রতিদিন) দেশের একটি প্রযুক্তি প্রতিষ্ঠান হলো “টিম ইঞ্জিন”। যারা প্রথমবারের মত সফলভাবে বাংলা ওসিআর তৈরি করতে সক্ষম হয়েছে । এই ওসিআরের একটি বড় বৈশিষ্ট্য হলো এর অ্যাকুরেসি রেট শতকরা ৯৪ ভাগ যা অন্যান্য ভাষার ওসিআরের থেকেও অনেক এগিয়ে। একইসাথে এর আর একটি গুরুত্বপূর্ণ বৈশিষ্ট্য হচ্ছে, বিজয় কীবোর্ডে লেখা একটি ইমেজকে ওসিআর করলে ইমেজের কনটেন্ট সরাসরি ইউনিকোড ফরম্যাটে চলে আসবে যা বেশিরভাগ অপারেটিং সিস্টেমে কোনো ধরণের বিচ্যুতি ছাড়াই উপস্থাপিত হবে।
মুহাম্মদ জাফর ইকবাল এই ওসিআরের স্বপ্নদ্রষ্টা। ওসিআর তৈরি করেছেন এসএম আল-আমিন (সম্রাট) ও তার টিম। টিম ইঞ্জিনের স্বপ্নদ্রষ্টা ও ব্যবস্থাপনা পরিচালক সামিরা জুবেরি হিমিকা এই বিষয়ে কথা বলেছেন প্রযুক্তি প্রতিদিন এর সাথে। বিস্তারিত নিয়ে লিখেছেন আহমেদ ইফতেখার

ন্যাশনাল লাইব্রেরি থেকে শুরু করে অন্য লাইব্রেরিকে অনলাইনে নিয়ে আসার একটি বড় মাধ্যম হিসেবে কাজ করবে ওসিআর। এছাড়া, সরকারি-বেসরকারি অনেক প্রতিষ্ঠান যেমন সংবাদপত্র শুধু ডকুমেন্টের ইমেজ ফরম্যাটটি ওয়েবে আপ করে দেয়। গবেষণা বা অন্য প্রয়োজনে কোনো তথ্য সার্চ দিলে ওই ইমেজ ফরম্যাট থেকে তা খুঁজে পাওয়া যায় না। ওসিআর অপটিক্যালি ক্যারেক্টারকে রিড করে পাঠককে এই তথ্যের সন্ধান দেবে।

এনবিআর, আদালত, ব্যাংক, জমির নিবন্ধন অফিস এ রকম অনেক সরকারি এবং বেসরকারি প্রতিষ্ঠান রয়েছে যাদের প্রাত্যহিক অফিসিয়াল কার্যক্রম সম্পাদন করতে অনেক পুরনো ডকুমেন্ট সার্চ করতে হয়। বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের কোনো বিষয়ে ডকুমেন্ট সার্চ করতে কোড নাম্বার দিয়ে সার্চ করতে হয়। নাম দিয়ে সার্চ করা যায় না। ওসিআর ব্যবহার করে এই সুবিধাটি পাওয়া যায়। ওসিআরের মাধ্যমে ডকুমেন্টের ইমেজকে ওয়ার্ডে কনভার্ট করে অথবা সরাসরি ইমেজ থেকে রিড করে আউটপুট বের করা যাবে।

ডিজিটাল বাংলাদেশের অন্যতম কাজ হলো প্রথমেই আন্তঃমন্ত্রণালয়ের কার্যক্রমকে ডিজিটাইজড করা। আর ডিজিটাইজড করার অনেকে ধাপ রয়েছে। একটি গুরুত্বপূর্ণ ধাপ হলো-ডকুমেন্টশন প্রক্রিয়াকে ডিজিটাইজড করা এবং পুরোনো ডকুমেন্টগুলোকে খোঁজায় সহজলভ্য করা।

বাংলাদেশ সরকার ওসিআর তৈরির জন্য নেপালকে দীর্ঘ আট বছর ধরে অর্থায়ন করে যাচ্ছে। কিন্তু এখন পর্যন্ত নেপাল আশানুরূপ ভূমিকা রাখতে পারেনি। একইসাথে ভারত সরকারকেও সাত বছর ধরে বাংলাদেশ অর্থায়ন করলেও তারা কেবল তাদের হিন্দি ভাষাকে ইংরেজি ভাষায় অনুবাদ করতে সক্ষম হয়েছে। কিন্তু এখন সেই নেপাল, ভারত ও পাকিস্তানই আমাদের তৈরি ওসিআরের জন্য আমাদের প্রতিষ্ঠানের কাছে সহযোগিতা চাচ্ছে। সুতরাং এটা আমাদের একটি বিরাট সফলতা।

বর্তমানে সরকারের কাছ থেকে আমরা কোনো আর্থিক সহায়তা চাইনা। তবে আমরা চাই সরকার যে ডিজিটাইজেশনের কথা বলছে, এর সুফল জনসাধারণের দোরগোড়ায় পৌঁছে দিতে চাচ্ছে, তারই অংশ হিসেবে আমাদের এই ওসিআর বিনামূল্যে প্রতিটি থানা ও উপজেলার স্কুল, কলেজ এবং বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর পাশাপাশি থানা সহায়তা কেন্দ্রে পৌঁছে দিক। এছাড়াও যদি কোনো প্রতিষ্ঠান বা ব্যক্তি ব্যক্তিগতভাবে ব্যাবহার করতে চান, তাহলে তিনি বিনামূল্যে ব্যবহার করতে পারবেন।

বাংলা ওসিআর বাজারে আসলে বাংলাদেশের দৃষ্টিপ্রতিবন্ধী যারা আছেন তাদের একটি বড় ধরণের উপকার হবে। তারা পাঠ্য বই হাতে পান অনেক দেরিতে। বাংলা ভাষায় ব্রেইল বই রয়েছে ৮-৯টি টাইটেলের। অডিও বুক আরও কম। ওসিআর ব্যবহার করে পুরনো বা নতুন বইকে ব্রেইল বইয়ে রূপান্তর খুব সহজেই করা সম্ভব। অডিও বুক করাও সহজতর হবে। বইটি স্ক্যান করেও করা যায় তবে টেক্সট এডিট করতে গেলে ওসিআর তাকে সাহায্য করবে।

ওসিআর ছাড়া আমাদের ইংরেজি ভাষায় টেক্সট টু স্পিচ রয়েছে। অন্যান্য ভাষায়ও রয়েছে। বাংলা ভাষায় প্রথম টেক্সট টু স্পিচ নিয়ে আসছে টিম ইঞ্জিন । ইংরেজি টেক্সট টু স্পিচ সফটওয়্যার দিয়েও এই কাজ করা যায় তবে সেক্ষেত্রে বাংলা লেখাকে ইংরেজি অক্ষরে লিখতে হয় যা অনেক জটিল প্রক্রিয়া । কিন্ত বাংলা টেক্সট টু স্পিচ সফটওয়্যার দিয়ে বাংলা লেখা থেকেই বাংলা পড়ে শোনাবে। টিম ইঞ্জিনের তৈরি করা টেক্সট টু স্পিচ সফটওয়্যারটির প্রথম পর্যায়টি শেষ হয়েছে। এটি এখন বাংলা টেক্সটকে ডিটেক্ট করতে পারে এবং পড়তে পারে। । কোথায় থামতে হবে সেটাও বুঝতে পারে। এখন সেখানে ইমোশন নিয়ে আসা হচ্ছে। বাংলা ভাষার টেক্সট টু স্পিচে মেশিন ভাষা নয়, হিউম্যান ভয়েস নিয়ে আসা হয়েছে।