মোবাইলফোন গ্রাহকের স্বার্থ রক্ষায় নীতিমালা হচ্ছে

(প্রযুক্তি প্রতিদিন) মানসম্মত মোবাইল ফোন সেবা নিশ্চিত করতে এবং অনাকাক্সিক্ষত কল ও এসএমএসে বিরক্তি থেকে গ্রাহককে মুক্তি দিতে দু’টি নীতিমালা করতে যাচ্ছে নিয়ন্ত্রক সংস্থা বিটিআরসি। ইতোমধ্যে জাতীয় টেলিযোগাযোগ গ্রাহক রক্ষা নীতিমালার খসড়া তৈরি করে সংশ্লিষ্টদের মতামত চাওয়া হয়েছে। আর মোবাইল ফোন গ্রাহকদের অনাকাক্সিক্ষত ফোনকল ও এসএমএস থেকে মুক্তি দিতে তৈরি করা হচ্ছে ‘ডু নট ডিস্টার্ব’ নীতিমালা। বিটিআরসি চেয়ারম্যান সুনীল কান্তি বোস বলেন, শিগগিরই নীতিমালা চূড়ান্ত করে কার্যকর করতে উদ্যোগ নেয়া হচ্ছে।
বর্তমানে মোবাইল ফোন গ্রাহকদের কাছে বিভিন্ন কোম্পানির বিজ্ঞাপন বা প্রমোশনাল এসএমএস ও ফোনকল আসে যাতে অনেকেই বিরক্ত বোধ করেন। মোবাইল ফোন গ্রাহকেরা অভিযোগ করছেন, সময়-অসময়ে ব্যাংকিং, ইন্সুরেন্স প্রতিষ্ঠান, আবাসন শিল্প, শিক্ষা, স্বাস্থ্য, নিত্যব্যবহারের দ্রব্য, অটোমোবাইল, ভ্রমণ বিষয়ে ফোনকল বা এসএমএস আসছে; যা বন্ধ করার কোনো উপায় তারা পাচ্ছেন না।
ডু নট ডিস্টার্ব নীতিমালা কার্যকর হলে টেলিমার্কেটিং কোম্পানির বিজ্ঞাপন বা প্রমোশনাল এসএমএস বা অনাকাক্সিক্ষত ফোনকল থেকে মোবাইল ফোন গ্রাহকেরা মুক্তি পাবে। কারো প্রয়োজন হলে এসএমএসের মাধ্যমে রেজিস্ট্রেশন করে গ্রাহকেরা এ সেবা পাবেন। একটি শর্ট কোড দিয়ে এ সেবার আওতায় এ ধরনের এসএমএস বা ফোনকল পুরোপুরি ব্লক না করে বিভিন্ন বিভাগ অনুযায়ী ব্লক করে দেয়ার সুযোগ থাকছে। এ জন্য গ্রাহকদের কোনো ফি দিতে হবে না। এ সেবা নেয়ার পর ২৪ ঘণ্টার মধ্যে তা কার্যকর করার বিধানও থাকছে এ নীতিমালায়। খসড়া এ নীতিমালায় উল্লেখ করা হয়েছে, মোবাইল ফোন অপারেটরদের কোনো সেবা সংস্কার বা বন্ধ রাখতে হলে গ্রাহকদের আগে থেকেই জানাতে হবে এসএমএস, ফোন বা দৈনিক পত্রিকায় বিজ্ঞাপনের মাধ্যমে। এতে বলা হয়, মোবাইল ফোন অপারেটরগুলো গ্রাহকদের ব্যক্তিগত তথ্য সুরক্ষায় প্রয়োজনীয় উদ্যোগ নেবে এবং গ্রাহকদের অনুমতি ছাড়া কাউকে গ্রাহক তথ্য দিতে পারবে না। মোবাইল ফোনের মাধ্যমে ইন্টারনেট ব্যবহারেও গ্রাহকের স্বার্থ রক্ষা করতে হবে অপারেটরদের। শিশুরা যাতে ইন্টারনেটের অপব্যবহার করতে না পারে সে ধরনের ব্যবস্থা অপারেটরদের তৈরি করতে হবে, যা অভিভাবকেরা নিয়ন্ত্রণ করতে পারবেন। মোবাইল ফোনের মাধ্যমে ইন্টারনেট ব্যবহারকারীদের যেকোনো ধরনের ভাইরাস থেকে মুক্ত রাখতেও উদ্যোগ নিতে হবে অপারেটরদের। কমপক্ষে ছয় মাসের বিল ওয়েবসাইটের মাধ্যমে গ্রাহকেরা যেন জানতে পারে সে ব্যবস্থাও করতে হবে অপারেটরদের। এ নীতিমালা জারির পর ৯০ দিনের মধ্যে বিটিআরসি কার্যালয়ে একটি অভিযোগ কেন্দ্র খোলা হবে, যেখানে গ্রাহকেরা অপারেটরদের সেবায় সন্তুষ্ট না হলে অভিযোগ জানাতে পারবে।
নীতিমালা দু’টির ব্যাপারে মোবাইল অপারেটরদের সংগঠন অ্যাসোসিয়েশন অব মোবাইল টেলিকম অপারেটরস অব বাংলাদেশের সেক্রেটারি জেনারেল টি আই এম নুরুল কবির বলেন, অপারেটরেরা গ্রাহকদের সেবা নিশ্চিত করতে সব সময় তৎপর থেকে কার্যকর ভূমিকা রাখছে। নতুন কোনো নীতিমালা চূড়ান্ত করার আগে অপারেটর ও নিয়ন্ত্রক সংস্থার সাথে একটি কনসালটেশন প্রসেসে যাওয়া উচিত, নীতিমালার ভালো-মন্দ দিক বিবেচনা করে চূড়ান্ত করলে তা গ্রাহকদের জন্য বেশি কার্যকর হবে।
নীতিমালাগুলো বাস্তবায়নের ওপর গুরুত্ব দিয়ে কনজ্যুমার অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের জেনারেল সেক্রেটারি হুমায়ুন কবির ভূঁইয়া বলেন, শুধু নীতিমালা করলেই হবে না, তা বাস্তবায়নে কঠোর নজরদারিও থাকতে হবে। তা না হলে গ্রাহকদের জন্য এ নীতিমালা কোনো কাজে আসবে না।