বাংলায় প্রসারিত হচ্ছে প্রযুক্তি দুনিয়া

(প্রযুক্তি প্রতিদিন) তথ্যপ্রযুক্তির এই যুগেও অনেকের ভাবনা, প্রযুক্তির জগতে অবাধ বিচরণ করতে হলে চাই ইংরেজি ভাষায় ব্যাপক দখল। একসময় কথাটার শতভাগ যৌক্তিকতা থাকলেও বর্তমান পেক্ষাপট বদলে গেছে।
এখন শতভাগ ইংরেজি না জানলেও বাংলা ভাষায় প্রযুক্তি ব্যবহার করা সম্ভব। দীর্ঘদিন পর হলেও আধুনিক বিশ্বের সঙ্গে তাল মিলিয়ে দেশের তথ্য, যোগাযোগ ও প্রযুক্তিতে প্রতিদিনই বাড়ছে মাতৃভাষা বাংলার ব্যবহার। বিশ্বের অন্যান্য ভাষার সঙ্গে পাল্লা দিয়ে এখন বাংলাতেই তথ্যপ্রযুক্তির নানা সুযোগ-সুবিধা গ্রহণ সম্ভব হচ্ছে। কম্পিউটারে লেখালেখি থেকে শুরু করে ওয়েবসাইট নির্মাণ, ই-মেইল আদান-প্রদান, ব্লগিং, ব্যাংকিসহ নানা কাজ হচ্ছে মহান ভাষা আন্দোলনের ফসল আমাদের প্রিয় মাতৃভাষা বাংলাতেই।
বাংলা ছড়িয়ে পড়েছে সামাজিক নেটওয়ার্ক ফেসবুক ও ব্লগে। এমনকি প্রবেশ ঘটেছে মোবাইল ফোনেও। বাংলাতেই আদান-প্রদান হচ্ছে বার্তা। সব মিলিয়ে আধুনিক বিশ্বে ইংরেজি বা অন্যান্য ভাষার সঙ্গে পাল্লা দিয়ে এগিয়ে চলেছে মাতৃভাষা বাংলা।
অতীতে কম্পিউটারে বাংলা লেখার জন্য বিভিন্ন জায়গায় বিভিন্ন প্রযুক্তি ব্যবহার করা হতো। একটার সঙ্গে অন্যটার মিল ছিল সামান্যই। সর্বজনীন ইউনিকোড আবিষ্কারের ফলে এখন সবকিছু অনেক সহজ হয়েছে। আর এর ফলে তথ্যপ্রযুক্তিতে বেড়েছে বাংলার বিবিধ ব্যবহার। এখন কম্পিউটারে বাংলা ভাষা লেখা যাচ্ছে নানাভাবেই। বিজয়, অভ্র, কিংবা অন্য কোনো কি-বোর্ড লে-আউট ব্যবহার করে বাংলায় লেখালেখি চলছে হরদম। ভাষা গবেষক, তাত্ত্বিক ও তথ্যপ্রযুক্তিবিদরা তথ্যপ্রযুক্তিতে বাংলা ভাষার এই পদচারণকে বিপ্লব হিসেবে অভিহিত করছেন। ইতিমধ্যে উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে একটি ইউনিকোড ফন্ট তৈরির। সরকারি উদ্যোগে তৈরি বাংলা ইউনিকোড এই ফন্টের নাম ‘আমার বর্ণমালা’।
উইকিপিডিয়ার তথ্য অনুসারে, বিশ্বে এখন অন্তত ২৩ কোটি ২০ লাখ মানুষ বাংলা ভাষা ব্যবহার করছেন। ভাষাভাষীর সংখ্যা অনুসারে বাংলার স্থান ষষ্ঠ। কোনো কোনো হিসাবে এ ভাষাভাষীর সংখ্যা এরই মধ্যে ২৫ কোটি ছাড়িয়ে গেছে এবং এর অবস্থান এখন চতুর্থ। ভারতে বাংলা দ্বিতীয় সর্বোচ্চ কথিত ভাষা।
আন্তর্জাতিক বর্ণ সংকেতায়ন ব্যবস্থা ইউনিকোডে বাংলা ভাষা যুক্ত হওয়ার পর এর সম্ভাবনার দুয়ার খুলে গিয়েছিল। জনপ্রিয় ইন্টারনেট সার্চ ইঞ্জিন গুগল ১৩০টি ভাষার সঙ্গে বাংলাকেও যুক্ত করেছে। ফলে এখন গুগল বাংলায়ও ব্যবহার করা যায়। জি-মেইল ১২টির ভাষার সঙ্গে বাংলাকেও অনুবাদিত ভাষা হিসেবে যুক্ত করায় এখন ফোনেটিক বাংলাতেই ই-মেইল আদান-প্রদান সম্ভব। এমন কি যিনি বাংলা টাইপ করতে জানেন না, তিনিও ফোনেটিকে ইংরেজি অক্ষরে বাংলা উচ্চারণে শব্দটি টাইপ করলে, এটি স্বয়ংক্রিয়ভাবে বাংলা হয়ে যাবে; যেমন এখন কিবোর্ডে ইংরেজিতে চঁশঁৎ লিখলে, জি-মেইল নিজেই অনুবাদ করে তা বাংলায় রূপান্তর করে নেবে ‘পুকুর’।