প্রিজমের মতো গোপনে গোয়েন্দাগিরি করছে ফ্রান্স

(প্রযুক্তি প্রতিদিন) যুক্তরাষ্ট্রের সাইবার নজরদারি কর্মসূচি প্রিজমের মতো ফ্রান্সেও চালু রয়েছে একই ধরনের তথ্য হাতিয়ে নেওয়ার কর্মসূচি। বিশ্বজুড়ে কোটি কোটি ব্যবহারকারীর ওপর যুক্তরাষ্ট্রের সাইবার নজরদারি কর্মসূচি প্রিজমের তথ্য ফাঁসের ঘটনার রেশ কাটতে না কাটতেই ফ্রান্সের উপর সবার মনোযোগ আকর্ষণ করেছে। এর মাধ্যমে প্রকাশ পেয়েছে ইউরোপীয় দেশটির পররাষ্ট্র বিভাগের গোয়েন্দারা ব্যাপক পরিসরে বিশ্বের বিভিন্ন দেশের কম্পিউটার ও টেলিফোনে আড়ি পাতার খবর। ব্যবহারকারীর ই-মেইল, এসএমএস, টেলিফোন কল, সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুক ও টুইটারে পোস্টের তথ্যে নজরদারি করছে ফরাসি গোয়েন্দা সংস্থা ডিরেক্টরেট জেনারেল ফর সিকিউরিটি এক্সটারনাল (ডিজিএসই)। এসব তথ্য জমা হয় ডিজিএসইর সার্ভারে। ফ্রান্সের রাজধানী প্যারিসে সংস্থাটির সদর দফতরে একটি ভূগর্ভস্থ ভবনের তিনটি তলায় রয়েছে এর সার্ভার। সম্পূর্ণ অবৈধ প্রক্রিয়ায় এরই মধ্যে কয়েক কোটি গিগাবাইটেরও বেশি তথ্য সংগ্রহ করেছে ডিজিএসই। শুরুতে সংগৃহীত তথ্য জমা হয় সংস্থার নিজস্ব একটি সুপার কম্পিউটারে। এরপর ফরাসি গুপ্তচর সংস্থাগুলো আবার এ তথ্য নিজেদের কাজে লাগায়। ফরাসি বা অন্য দেশের নাগরিকদের এসব তথ্যে নাক গলানোর সুযোগ পায় ফ্রান্সের সামরিক গোয়েন্দা, অভ্যন্তরীণ গোয়েন্দা, প্যারিস পুলিশ বিভাগ ও অর্থনৈতিক অপরাধ দমনে বিশেষ টাস্কফোর্সসহ অন্য গুপ্তচর সংস্থাগুলো। বিশেষজ্ঞদের মতে, প্রিজম কর্মসূচিতে সরাসরি ব্যবহারকারীর তথ্য সংগ্রহ করে নাই এনএসএ। মূলত সিলিকন ভ্যালির শীর্ষস্থানীয় প্রযুক্তি প্রতিষ্ঠানগুলোর সার্ভারেই তারা নজরদারি করে। প্রায় সব ব্যবহারকারীই গুগল, মাইক্রোসফট, ফেসবুক, ইয়াহু ও অ্যাপলের বিভিন্ন সেবা গ্রহণ করেন। এসব প্রতিষ্ঠানের সার্ভারে নজরদারি করার মাধ্যমেই প্রয়োজনীয় তথ্য জোগাড় করা সম্ভব হয়। ফরাসি গোয়েন্দারা ই-মেইলের ভেতরের তথ্যে নজরদারি করেন না। আড়ি পাতার জন্য গুপ্তচর উপগ্রহ, বেতারকেন্দ্র ও সমুদ্রগর্ভে স্থাপিত ক্যাবলের ওপর নির্ভর করে ডিজিএসই। ফ্রান্সের বাইরেও রয়েছে এ ধরনের কিছু উৎস।
ডিজিএসই বিভিন্ন ব্যক্তির ই-মেইলের অভ্যন্তরীণ তথ্যে নজরদারি করে না, বরং এর গ্রাহক, প্রেরক, পাঠানোর স্থান, সময় ও গন্তব্য সম্পর্কে তথ্য সংগ্রহ করে। এ পদ্ধতিকে তারা উল্লেখ করে মেটাডাটা নামে। ফ্রান্সের ভেতরে ও ফ্রান্সের সঙ্গে অন্য দেশের মধ্যে আদান-প্রদান হওয়া ই-মেইলেই তারা নজরদারি করে।
ফরাসি সংস্থা ডিরেক্টরেট জেনারেল ফর এক্সটারনাল সিকিউরিটি ব্রিটেনের এমআইসিক্সের মত কর্মক্ষম। ফ্রান্সের রাজধানী প্যারিসে ডিজিএসইর সদর দফতরের ভূগর্ভস্থ ভবনে একটি গোপন ডাটাসেন্টারে আড়ি পেতে জোগাড় করা তথ্য সংরণ করা হয়। সন্ত্রাসবাদের তথ্য জানার জন্যই এ কর্মসূচি চালু করে ফ্রান্স। কিন্তু এ ধরনের ব্যবস্থা থাকার মানে, যে কারো ওপর নজরদারি করা।