টেক্সট মেসেজের বিকল্প হয়ে উঠছে ফটো শেয়ারিং

(প্রযুক্তি প্রতিদিন) টেক্সট মেসেজ বা চ্যাটিংয়ের মাধ্যমে নিজের অবস্থা জানানোর চেয়ে ফটো শেয়ারিং প্রযুক্তি বেশি জনপ্রিয় হয়ে উঠছে। বর্তমানে প্রায় সবার হাতে থাকা ক্যামেরাযুক্ত মোবাইল ডিভাইসের কল্যাণে এ সেবা আরো বেশি জনপ্রিয়তা পাচ্ছে।
গুগলের সহপ্রতিষ্ঠাতা সার্গেই ব্রিন জানিয়েছেন, আমি এখন এসএমএস করা প্রায় ছেড়েই দিয়েছি। খাবার খেতে খেতে হঠাৎ করে কোনো বন্ধুর কাছ থেকে এসএমএস এলে টাইপ করে তার উত্তর দিতে বেশি ঝামেলা পোহাতে হয়। আমার চোখে থাকা গুগল গ্লাসের সাহায্যে খাবারের ছবি তুলে পাঠিয়ে দিলে আমি কী করছি, কী খাচ্ছি; সেটা একবারেই জানতে পারছে। যোগাযোগ বিশেষজ্ঞদের মতে, ছবিতে ভাষার কোনো বাধা নেই। সব বয়স, জাতি কিংবা বর্ণের লোক সহজেই একটি বিড়ালের ছবি চিনতে পারছে।
সামাজিক যোগাযোগের এ যুগে টুইটারে টুইট কিংবা ফেসবুকে সার্বক্ষণিক পোস্ট করতে থাকেন অনেকে। কার্যকর উদ্দেশ্য নিয়ে করা হলেও এতে বেশখানিকটা সময়ের অপচয় হয়। এ ঝামেলা থেকে রেহাই পেতেই প্রযুক্তিপ্রেমীরা বেছে নিচ্ছেন ছবি তোলাকে। এতে একসাথে প্রেরকের অবস্থান ও অবস্থা খুব সহজেই বোঝা যায়।
হার্ভার্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের আলোকচিত্র বিষয়ের অধ্যাপক রবিন কেলসি বলেন, আগে ছবি তোলা ছিল অতীতকে ধরে রাখার প্রয়াস মাত্র। আর এখন তা বদলে গিয়ে প্রতি মুহূর্তকেই তুলে ধরা হচ্ছে ছবির মাধ্যমে। নতুন এ প্রবণতা প্রযুক্তি প্রতিষ্ঠানগুলোর অজানা নয়। এ কারণে শত শত কোটি ডলার বিনিয়োগে ইয়াহু চালু করেছে ফ্লিকার, ফেসবুকের রয়েছে ইনস্টাগ্রাম। টুইটারও এত দিনের টেক্সটনির্ভর পদ্ধতির পাশাপাশি ছবি বিনিময়ের সুযোগ করে দিচ্ছে। সব ধরনের সামাজিক যোগাযোগ প্লাটফর্মই চাইছে গ্রাহকদের ছবি কিংবা ভিডিও নিজেদের কাছে জমা রেখে তা দিয়ে যোগাযোগকে আরো সহজ করতে। প্রতিষ্ঠানগুলোর আশঙ্কা নতুন ধারার এ যোগাযোগ মাধ্যমের সাথে মানিয়ে নিতে না পারলে প্রতিযোগিতা পিছিয়ে পড়ার পাশাপাশি গ্রাহকদের কাছে আকর্ষণও হারাতে হতে পারে।
ইতিহাসবিদদের মতে, প্রায় ২০ হাজার বছর ধরে ছবি যোগাযোগের মাধ্যম হিসেবে ব্যবহার হচ্ছে। বিশেষ করে লেখা আবিষ্কারের আগে কোনো কিছু অনুপস্থিত কাউকে বোঝাতে ছবিরই সাহায্য নিত প্রাকসভ্যতা যুগের মানুষেরা। ফ্রান্সের লাস্কা গুহা কিংবা অজন্তার দেয়ালে আঁকা ছবিগুলো সেটারই প্রমাণ। তবে আদিম শিকারি মানুষদের আঁকা সেসব ছবি ব্যাপক আকারে ছড়িয়ে পড়ার সম্ভাবনা ছিল না। কিন্তু ইভান স্পিজেলের হাত ধরে বেড়ে ওঠা স্ন্যাপচ্যাটে এখন দৈনিক ২০ কোটির বেশি ছবিবার্তা আদান-প্রদান হচ্ছে।
ইনস্টাগ্রামে প্রতিদিন প্রায় সাড়ে চার কোটি ছবি বিনিময় হচ্ছে। মাত্র তিন বছর আগে চালু হওয়া এ সাইটে এরই মধ্যে বিনিময় হয়েছে এক হাজার ৬০০ কোটিরও বেশি ছবি। ফেসবুকে প্রতিদিন বিনিময় হচ্ছে ৩০ কোটি ছবি, বছর শেষে তা গিয়ে দাঁড়াচ্ছে ১০ হাজার কোটিরও বেশি। একই সাথে ছবি, ভিডিও, টেক্সট কিংবা অডিও পাঠানোর সুযোগ দিয়ে থাকে হোয়াটস অ্যাপ। এ সেবায় প্রতিদিন বিনিময় হচ্ছে দুই হাজার ৭০০ কোটিরও বেশি বার্তা। মাত্র দুই সপ্তাহ আগে চালু হওয়া ইনস্টাগ্রাম ভিডিওতে সুযোগ রাখা হয়েছে ১৫ সেকেন্ডের ভিডিও ক্লিপ পাঠানোর।