কাজের ক্ষেত্র হিসাবে ফ্রিল্যান্সিং সহজ নয় বরং চ্যালেঞ্জিং : আলামিন চৌধুরী

দেশের অসংখ্য ফ্রিল্যান্সার এখন আউটসোর্সিং করে ঘরে বসেই প্রচুর বৈদেশিক মুদ্রা আয় করছেন। এরকমই একজন আলামিন চৌধুরী। বাংলাদেশ অ্যাসোসিয়েশন অব সফটওয়্যার সার্ভিসেসের (বেসিস) শীর্ষ ফ্রিল্যান্সার পুরস্কার বিজয়ী আলামিন চৌধুরী ফ্রিল্যান্সিং এর বর্তমান প্রেক্ষাপট সম্পর্কে প্রযুক্তি প্রতিদিনকে তার বিভিন্ন মতামত জানিয়েছেন।

পেশা হিসাবে ফ্রিল্যান্সিং বেছে নেওয়ার কারন?
আমার পেশা হিসাবে ফ্রিল্যান্সিং বেছে নেওয়ার পিছনে অনেক গুলো কারণ রয়েছে। এর মধ্যে সবচেয়ে পছন্দের কারণ হলো স্বাধীনতা। এখানে আমিই আমার বস। প্রয়োজনে আমি কাজ কম বেশি করতে পারি। যা সাধারন কোন গতানুগতিক কাজের ক্ষেত্রে সম্ভব না। ফ্রিল্যান্সিং কাজের ক্ষেত্রে অফিসে যাওয়ার প্রয়োজন নেই। নিজের পছন্দের পরিবেশে অবস্থান করে প্রয়োজনীয় কাজ ক্লায়েন্টকে বুঝিয়ে দিতে পারলেই আমি মুক্ত। এখানে আপনি আপনার ক্লায়েন্টের মনমতো কাজটি করতে পারলে উপযুক্ত সম্মানিও পাবেন। এক কথায় এখানে পছন্দ মত কাজ বেছে নেওয়ারও সুযোগ রয়েছে। এসব কারনে আমি ফ্রিল্যান্সিং পেশায় এসেছি।

অনলাইন মার্কেটপ্লেস গুলোতে আপনি কি ধরনের কাজ করছেন?
আমি মূলত এসইও (সার্চ ইঞ্জিন অপটিমাইজেসন), এসইএম (সার্চ ইঞ্জিন মার্কেটিং) এবং এসএমএম (সোস্যাশ মিডিয়া মার্কেটিং) নিয়ে কাজ করি। একটি সাইটকে কিভাবে গুগল সার্চ ইঞ্জিনের শীর্ষে নিয়ে যাওয়া যায় এবং তা ধরে রাখার বিভিন্ন পর্যায়ের কাজ আমি করে থাকি। সাইট শীর্ষে না আসলে আপনার সাইটে পর্যাপ্ত ভিজিটর আসবে না। এটা ই-কমার্স সাইটের ক্ষেত্রে খুবই গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। ফেসবুক, টুইটার, পিন্টারেস্ট, ইউটিউব এর মাধ্যমে সোশ্যাল মিডিয়া মার্কেটিং করে ক্লায়েন্টের ব্যাবসাকে প্রসারিত করতে সহায়ক ভূমিকা পালন করে।

কাজের ক্ষেত্র হিসাবে ফ্রিল্যান্সিং কতটুকু চ্যালেঞ্জিং পেশা?
কাজের ক্ষেত্র হিসাবে ফ্রিল্যান্সিং মোটেই সহজ যায়গা না। এটা অনেক চ্যালেঞ্জিং পেশা। কারণ আন্তর্জাতিক মার্কেটপ্লেসে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করে আপনাকে কাজ পেতে হবে। কাজ পেলেই শেষ নয় আপনার ক্লায়েন্টকে সন্তুষ্ট রাখতে হবে। না হলে সামনে আগানো মুশকিল। আন্তর্জাতিক মার্কেটপ্লেসে সব কাজেরই চাহিদা রয়েছে। সবাই সব ধরনের কাজ করতে পারে না। অনেকেই মনে করেন ডাটা এন্ট্রির কাজ সহজ তবে এ কাজের জন্য যে পরিমান ধৈর্য দরকার তা আমাদের অনেকেরই নাই।

বেসিস দেশের ফ্রিল্যান্সারদের কি ধরনের সেবা দিচ্ছে?
বেসিস আমাদের ফ্রিল্যান্সারদের জন্য যেটুকুই করছে সেটাই আমাদের জন্য অনেক বড় পাওয়া। বেসিস চায় তরুণ ফ্রিল্যান্সাররা দেশের ইকোনোমিতে আরো বড় অবদান রাখুক। নন টেকনিক্যাল তরুণরাও ফ্রিল্যান্সিং এ আসতে পারে। এখানে কাজের ক্ষেত্রটা অনেক বড়। বেসিস আগামী দিনেও দেশের ফ্রিল্যান্সারদের উন্নয়নে কাজ করবে আমি সেটাই আশা করি। সব ফ্রিল্যান্সারের এখন অন্যতম দাবি হলো যত দ্রুত সম্ভব দেশে পেপাল চালু করা। পেপাল না থাকায় তৃতীয় পক্ষকে মোটা অঙ্কের কমিশন দিতে হচ্ছে। প্রতিবার টাকা তোলার সময় অতিরিক্ত ১০ থেকে ১৫ ডলার গচ্চা যাচ্ছে।

কবে থেকে কোন প্রেক্ষাপটে ফ্রিল্যান্সিং শুরু করেছেন?
আমার ফ্রিল্যান্সিং এর শুরু ২০০৩ সালের শেষ দিকে। আমি বাজার ব্যাবস্থাপনা ভালো বোঝার কারনে শুরুতে এসইও কে প্লাটফর্ম হিসাবে বেছে নিয়েছিলাম। এরপর কাজের সুবাধে বুঝতে পারলাম আগামী দিনে এসইও এর ভালো সম্ভাবনা রয়েছে। তখন থেকেই এসইও নিয়ে কাজ করছি।

মার্কেটপ্লেস হিসেবে আপনি কোন প্রতিষ্ঠানকে বেশি প্রধান্য দিচ্ছেন?
মার্কেটপ্লেস হিসাবে শুরুতেই আমি Odesk.com এর কথা বলবো। এর পর কাজ করতে পারেন freelancer.com, elance.com, 99designs এর মতো প্রতিষ্ঠানে। এখানে প্রোফেশনাল ফ্রিল্যান্সাররা নিয়মিতই কাজ করছে মার্কেটপ্লেস হিসাবে। নতুন যে কোন মার্কেটপ্লেসে কাজ শুরুর আগে ভালো করে জেনে বুঝে নিন।

আপনার পড়াশোনার বিষয়?
আমার পড়াশোনার মূল বিষয় ছিল সাইন্স ও কমার্স। ইংলিশ মিডিয়াম থেকে ও এবং এ লেবেল শেষ করে এসিসিএ করেছি।

শৈশবে কি হতে চেয়েছিলেন?
শৈশবে পাইলট হতে চেয়েছিলাম।

আপনার প্রাপ্তি কতটুকু?
প্রাপ্তি বলতে মনে করি আমি তো মাত্র শুরু করেছি পূর্নতা পেতে আরো সময় লাগবে।

তরুণদের স্বনির্ভরতার জন্য ফ্রিল্যান্সিং কতটুকু সফল বাংলাদেশের প্রেক্ষাপটে?
আমাদের দেশের প্রেক্ষাপটে তরুনদের সাফল্যের চাবিকাঠি হলো ফ্রিল্যান্সিং। বর্তমান প্রেক্ষাপটে একজন তরুণ চোখবুজে ফ্রিল্যান্সিং জগতে ক্যারিয়ার গড়তে পারে। তবে সবাইকে মনে রাখতে হবে ফ্রিল্যান্সিং কোন দীর্ঘমেয়াদি পেশা না। সবসময় চেষ্টা থাকতে হবে ফ্রিল্যান্সার থেকে সফল উদ্যোক্তা হওয়ার।

পড়াশোনার পাশাপাশি ফ্রিল্যান্সিং করা সম্ভব কিনা? এতে শিক্ষার্থী কতটুকু লাভবান হতে পারে?
অবশ্যই পড়াশোনার পাশাপাশি ফ্রিল্যান্সিং করা সম্ভব। তবে পড়াশোনার ক্ষতি করে বা বাদ দিয়ে ফ্রিল্যান্সিং করার কোন মানে নাই। কারণ ভালো কাজের জন্য পড়াশোনা করতে হবেই। আমি নিজে যতটুকু সফল হয়েছি তাও পড়শোনা ছিল বলেই পেড়েছি। তবে কেউ পড়াশোনার পাশাপাশি প্রতিদিন অল্প করে হলেও কাজ করলে তার কাজের দক্ষতা বেশি হবো পাশাপাশি উদ্যোক্তা হতে পারবেন।

নতুনদের জন্য পরমর্শ :
নতুনরা যারা ফ্যিল্যান্সিং এ আসতে চাও তারা বুঝে শুনে ফ্রিল্যান্সিং শুরু করলে সফলতা আসবেই। এক্ষেত্রে প্রয়োজনে দক্ষ কোন ফ্যিল্যান্সারের কাজ থেকে প্রশিক্ষন নিয়ে কাজ শুরু করতে পারো। নতুন কোন মার্কেটপ্লেসে কাজ শুরুর আগে ভালো করে জেনে তারপর কাজ শুরু করা উচিত। প্রতিষ্ঠিত কোন মার্কেটপ্লেসে কাজ শুরু আগে কোন টাকা পয়সা দিতে হয় না। বর্তমানে অসংখ্য ভুয়া প্রতিষ্ঠান গড়ে উঠেছে এসব প্রতিষ্ঠান থেকে সাবধান থাকুন।

ফ্রিল্যান্সিং নিয়ে আপনার ভাবনা :
আমি চাই আগামী দিনে প্রতিটি ঘরে একজন করে ফ্রিল্যান্সার গড়ে উঠুক। যারা একদিন উদ্যোক্তা হবে। এভাবে চলতে থাকলে আমাদের চাকরিবিহীন মানুষের সংখ্যা অচিরেই কমে যাবে।

সাক্ষাৎকার নিয়েছেন আহমেদ ইফতেখার