ওয়ার্ডপ্রওয়র্ডপ্রেসের নির্মাতা : ম্যাট মুলেনওয়েগ

(প্রযুক্তি প্রতিদিন) ২০১২ সালের হিসেব অনুযায়ী সারাবিশ্বের শতকরা ১৬ ভাগ ওয়েবসাইট দখল করে আছে ওয়ার্ডপ্রেস। এই হিসেব এখন জ্যামিতিক হারে বৃদ্ধি পাচ্ছে। ওয়েব এবং ওয়ার্ডপ্রেস শব্দ দু’টি এখন সমার্থক শব্দ হিসেবে বিবেচিত হয়।ওয়ার্ডপ্রেসের জন্ম ২৭ মে ২০০৫।
ওয়ার্ডপ্রওয়র্ডপ্রেসের নির্মাতা (কো-ফাউন্ডার) ম্যাট মুলেনওয়েগ জানিয়েছেন তাদের চিন্তা-চেতনা এবং পরবর্তী ১২ মাসের কর্মপরিকল্পনা। নিত্যনতুন চ্যালেঞ্জ নিয়ে প্রতিদিন সকালে অধীর আগ্রহে জেগে ওঠেন মুলেনওয়েগ।
তিনি জানিয়েছেন, যখন লিটল মাইক এবং আমি ওয়ার্ডপ্রেস প্রথম রিলিজ দেই; আমরা ভাবতেও পারিনি ওয়ার্ডপ্রেস আজকের এই অবস্থানে এসে পৌঁছবে। অনেকটা বিস্ময়কর ভাবে সবকিছু ঘটেছে।
শুরুতে আমরা শুধু ব্লগিং-এর কথা বিবেচনা করেই কাজ করে গেছি। এবং সেটা নিজেদের কথা ভেবেই। শুরুর কয়েক বছর কতটা ইউজার ফ্রেন্ডলিভাবে ওয়ার্ডপ্রেস তৈরি করা যায় সেটাই ছিলো মূল লক্ষ্য। আজকের এই অবস্থানে আসার জন্য শুধু আমরা নই, অনেকেই সহযোগিতা করেছেন।
যারা সহযোগিতা করেছেন তারা নিজেদের কথা ভেবেই। সেসব লেখক/ব্লগারদের নিজস্ব ব্যবহারের নিজস্ব চিন্তা-চেতনাই আজকের এই বহি:প্রকাশ। একটা বিন্দু থেকে আমাদের যাত্রা শুরু। আমরা ভাবতে থাকি- একজন ইউজার, ডেভেলপারের চাহিদাগুলো নিয়ে। সেই অনুযায়ী আমরা কাজ করে যেতে থাকি। থিম অবকাঠামো, কাস্টমাইজেশন, কাস্টম পেইজ, পোস্ট ইত্যাদি সহজীকরণ ছিলো আমাদের মূল চিন্তার আওতাভুক্ত।
সব একীভূত হলে আমরা মনে করি একটা বীজ রোপন করা হয়েছে ভালোভাবে। যা ধীরে ধীরে বাড়তে থাকে। আমাদের কাজের মোটামুটি একটা বহি:প্রকাশ ঘটে ওয়ার্ডপ্রেস ৩.০ ভার্সনে। চূড়ান্তভাবে; যদিও সফলতা না বলে আমাদের চিন্তা-চেতনার প্রস্ফূটন বলা যায়; কাজ হচ্ছে বাডিপ্রেস, বিবিপ্রেস- যার সাহায্যে আপনি ফোরাম এবং সোশ্যাল নেটওয়ার্ক ক্রিয়েট করতে পারবেন অতিসহজে। ই-কমার্সের মতো সাইটও আপনি সহজে বানাতে পারছেন উওকমার্সের মতো প্লাগিন ইউজ করে। এগুলোকে কি সফলতা বলা যায়? শুধু এটুকু বলা যায়- ওয়ার্ডপ্রেসের প্রসার এখন অনেক দূর।
আমি মনে করি নতুন ডেভেলপাদের জন্য ওয়ার্ডপ্রেস একটা গেটওয়ে। আপনি চমৎকার ওয়েবসাইট তৈরি করতে পারবেন একলাইনও কোড না লিখে। আপনি শুরু করবেন সিএসএস-এর ছোট্ট একটা কোড লিখে, ধীরে ধীরে আপনার হাত সম্প্রসারণ হবে। আপনি শিখবেন জেক্যুয়েরি, পিএইচপি। দক্ষ হবে প্রয়োজনের তাগিদেই। আর এটাই আমার চিন্তা যা আমি ভালোবাসি।
কিন্তু আমি কিছু একটা করতে চেয়েছি। ফলে আমি ওয়েবে পড়তাম বিভিন্ন টিউটোরিয়াল, বই, ব্লগ (zeldman.com, meyerweb.com ইত্যাদি)।
ডেভেলপারের ভবিষ্যত সীমাব্ধ হয়ে থাকে না। তাদের জন্য প্রতিনিয়ত চ্যালেঞ্জ থাকে এবং শেখার সুযোগ থাকে অনলাইন জগতে।
সত্যি বলতে, আমি বিস্মিত! ওয়ার্ডপ্রেসের রয়েছে এক ডজন কোর ডেভেলপার, ১৫০ জন কোর কন্ট্রিবিউটর, ৩০০ জন কমিউনিটি স্বেচ্ছাসেবক, ২০ হাজার প্লাস প্লাস প্লাগিন এবং থিম ডেভেলপার। এবং প্রায় এক লাখ লোক ওয়ার্ডপ্রেস প্লাটফর্মে নির্মিত ওয়েসাইটের পরামর্শদাতা, ডিজাইনার, ডেভেলপার, লেখক হিসেবে জীবিকা নির্বাহ করে।
তবে সবচেয়ে আশ্চর্যজনক হলো- আপনি যতো বড় প্রোগ্রামারই হোন না কেন, আপনি চাইলেই গুগলের কোনো ইঞ্জিনিয়ারের সাথে কোড লিখতে পারবেন না। যা সম্ভব হচ্ছে আমাদের সাথে। আপনি চাইলেই অতি সহজে আমাদের কমিউনিটির সাথে এড হতে পারেন make.wordpress.org/core/handbook এখানে এসে। এমনকি আপনি যদি একলাইন কোডও লিখতে না পারেন তাও অনেক ওয়ে রয়েছে আমাদের কমিউনিটি, ফোরাম ইত্যাদির মাধ্যমে আমাদের কাজে অংশগ্রহণ করার। আমরা সবসময়ই সবাইকে স্বাগতম জানাই আমাদের সাথে যোগ দেয়ার জন্য।
এ বছর আমরা আমাদের সাইটে হোস্টেড করা প্রায় ২০ হাজার প্লাস প্লাস প্লাগিনের প্রোঅ্যাক্টিভলি স্ক্যানিং করেছি সুরক্ষার জন্য। আমরা শত শত সমস্যার সমাধান করেছি। প্রতিনিয়ত আমাদের ডেভেলপার, কন্ট্রিভিউটর, ভলান্টিয়াররা করেই চলেছে সমাধান। সেই সাথে কীভাবে আরও সুরক্ষিত এবং মানসম্মতভাবে প্লাগিন, থিম কোডিং করা যায় সেই সম্পর্কে আমরা সবাইকে সচেতন করার চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছি।
দ্বিতীয়ত: আমরা কিছু প্রশংসনীয় উদ্যোগ নিয়েছি। ফলে এখন আরও সহজে আপনি বুঝতে পারবেন প্লাগিনগুলোর কার্যকারিতা সম্পর্কে। উদাহরণ হিসেবে বলা যায়- আমরা প্লাগিনের রেটিং-এর চেয়ে বেশি গুরুত্ব দিচ্ছি এখন সাপোর্টকে। একটা প্লাগিনের লেখক কী পরিমান সাপোর্ট দিচ্ছেন তার উপর ভিত্তি করে আমরা প্লাগিনটার গুরুত্ব তোলে ধরছি। যা খুবই কার্যকরী হচ্ছে সচেতন সবার মাঝে।
আগামী ১২ মাসে আমি তিনটি প্রধান বিষয়ের উপর দৃষ্টি নিবন্ধ করাতে চাই:
ডেভেলপাররা প্রতিনিয়ত চেষ্টা করে যাচ্ছেন ফটো আপলোডিং, গ্যালারি এবং ফিচার ইমেজ আরও কীভাবে সহজীকরণ করা যায় সেব্যাপারে। আশা করি সবাই এটা এপ্রিশিয়েট করবেন।
ওয়ার্ডপ্রেসকে আরও শক্তিশালী করার জন্য অটোম্যাট্টিক Jetpack নিয়ে কাজ করে যাচ্ছে। ফলে ওয়ার্ডপ্রেস হবে আরও সামাজিক। ফলে খুব সহজে আপনার ওয়েবসাইট সোশ্যাল নেটওয়ার্ক-এর আওতাভুক্ত হবে।
সবচেয়ে উত্তেজনাকর বা সুখবর হলো- ওয়ার্ডপ্রেস আরও ইউজার ফ্রেন্ডলি করা হবে। ফলে কোনোরকম কোডিং জ্ঞান ছাড়াই আপনি আরও দ্রুত ওয়ার্ডপ্রেসে কাজ করতে সক্ষম হবেন।
আমাদের সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ মোবাইল ফোন এবং ট্যাবলেট- যা নিয়ে ইতোমধ্যে আমরা কাজ শুরু করে দিয়েছি। ইতোমধ্যে ৪ মিলিয়নের বেশী ব্যবহারকারীর মধ্যে এটি করা হয়েছে। আমাদের বিনিয়োগও এই খাতে বৃদ্ধি করেছি। আমরা টিকে থাকবো কিনা সেটা নির্ভর করছে আমরা কতটা ইউজার ফ্রেন্ডলি হতে পারছি তার উপর। সেটা সময়ই বলে দেবে।
নিত্যনতুন চ্যালেঞ্জ নিয়ে প্রতিদিন সকালে অধীর আগ্রহে জেগে ওঠি আমি। আমি মনে করি তাদের সাথে তুলনা করার মতো এখনও সময় আসেনি। কেননা আমার কাজ এখনো শেষ হয়নি বলেই মনে করি। আমরা এখনো সম্পূর্ণ না।
আমরা মাত্র ১৬ শতাংশে উন্নীত হয়েছি। আমাদের ইচ্ছে, আশা, আকাঙ্খা আরও বহুদূর। সময় আমাদেরকে চলতে সহায়তা করবে। আমরা কাজ করে যাচ্ছি।