ইয়াহুতে প্রান সঞ্চার করেছে মারিসা

(প্রযুক্তি প্রতিদিন) বিশ্বের অন্যতম অনলাইন সেবাদাতা প্রতিষ্ঠান ইয়াহু মারিসা মায়ারের ছোঁয়ায় হারানো স্বর্ণযুগ ফিরে পেয়েছে। গত বছরের ১৭ জুলাই ইয়াহুর প্রধান নির্বাহী হিসেবে যোগ দেন তিনি। আজ ইয়াহুতে এক বছর পূর্তি হলো মারিসার। মাত্র এক বছরের ব্যবধানে একটি প্রতষ্ঠানের পালে কতটুকু ছোয়া লাগানো যায় তা দেখিয়ে দিয়েছে ইয়াহু।

গত ছয় বছরে ইয়াহুতে ছয়জন প্রধান নির্বাহী বদল হলেও বদলায়নি ইয়াহু। গুগল, ফেসবুক যখন তরতর করে জনপ্রিয় হয়েছে ইয়াহু জনপ্রিয়তা হারিয়েছে। এমনই হতাশায় ডুবতে বসা একটি প্রতিষ্ঠানকে আশার আলো দেখিয়েছেন ৩৮ বছর বয়সী মারিসা। ইয়াহুতে আসার আগে গুগলের শীর্ষ কর্মকর্তাদের একজন ছিলেন তিনি। মারিসাকে প্রধান নির্বাহী পদে নিয়োগ দিয়ে যেন ইয়াহুর সব সংশয় এখন কেটে গেছে।

গত বছর গুগল ছেড়ে মারিসা যখন ইয়াহুতে যোগ দিয়েছিলেন তখন অগোছালো ইয়াহুর সামনে ছিল মহা-বিপদসংকেত। মারিসার জাদুর কাঠির ছোয়ায় বর্তমানে ইয়াহুতে অধিক সময় কাটাচ্ছেন ব্যবহারকারীরা। এর পাশাপাশি মেধাবী প্রকৌশলী ও উদ্যোক্তারা ইয়াহুর হয়ে কাজ শুরু করেছেন। সর্বপোরি ভরসা পাচ্ছে ইয়াহুর বিনিয়োগকারীরা।

মারিসা মায়ার ১৯৯৯ সালে গুগলের ২০তম কর্মকর্তা হিসেবে নিয়োগ পেয়েছিলেন। গুগলে তিনিই প্রথম নারী কর্মকর্তা হিসেবে যোগ দিয়েছিলেন। তিনি ছিলেন গুগলের জ্যেষ্ঠ পরিচালনা পরিষদের সদস্যও ছিলেন। গুগল সার্চের জিও/লোকাল সার্ভিস দেখাশোনা করা ও ইঞ্জিন ব্যবহারকারীদের সুবিধা নিশ্চিত করতে কাজ করেছিলেন মারিসা। গুগল থেকে প্রধান নির্বাহী হয়ে ইয়াহুতে চলে আসেন তিনি। ২০০৮ সালে প্রযুক্তি বিশ্বে বেশ আলোড়ন তুলেছিলেন তিনি। এই সময় ফরচুন সাময়িকীর বিচারে সেরা ৫০ জন প্রভাবশালী নারীর তালিকায়ও তাঁর নাম উঠেছিল।

মারিসা ইয়াহুতে এসে নতুন করে সাজিয়েছেন ইয়াহুর হোমপেজটি, ফ্লিকার সেবার নতুন নকশা করেছেন, বেশ কয়েকটি মোবাইল অ্যাপ্লিকেশন আপগ্রেড করেছেন এবং ইয়াহুকে অনলাইন সেবা হিসেবে জনপ্রিয় করতে বেশ কিছু নতুন পদক্ষেপ নিয়েছেন। সবচেয়ে বড় সাফল্য হচ্ছে, তাঁর অধীনে তিন বছর ক্রমাগত লোকসানের মুখ দেখতে থাকা ইয়াহু আবার লাভজনক প্রতিষ্ঠানে পরিনত হচ্ছে।

প্রযুক্তি-বিশ্বে অনলাইন সেবাদাতা হিসেবে প্রতিযোগিতায় নানাভাবে পিছিয়ে পড়ছিল ইয়াহু। মারিসা শুরুতেই ইয়াহুর জনপ্রিয় সেবা ইয়াহু মেইলে আনেন পরিবর্তন। বিশ্বে বর্তমানে জিমেইল ও হট-মেইলের পর ই-মেইল সেবায় তৃতীয় স্থানে রয়েছ ইয়াহু। তিনি যোগ দেওয়ার পর থেকে নতুন উদ্যোগের ফল পেতে শুরু করে ইয়াহু।
মারিসার জন্য বড় চ্যালেঞ্জ ছিল মোবাইল প্ল্যাটফর্মে ইয়াহুকে ব্যবহার-বান্ধব করা। তিনি সে উদ্যোগও নিয়েছেন। প্রযুক্তি বাজারে ইয়াহুকে শীর্ষে নেওয়ার লড়াইয়ে ব্যস্ত তিনি। ইয়াহুতে এসে কর্মকর্তাদের উৎসাহ দিতে বিনা মূল্যে খাবারের ব্যবস্থা এবং বিনা মূল্যে স্মার্টফোন বিতরণসহ বেশ কিছু নতুন পদ্ধতি চালু করার ফলে কর্মীদের মধ্যে তার গ্রহণযোগ্যতা পেয়েছেন অনেক বেশি।

ইয়াহুতে পরিবর্তনের ছোয়া
পুরোনো সংস্করণের মেইল সেবা ‘মেইল ক্ল্যাসিক’ বন্ধ করে দিয়েছে ইয়াহু। নতুন সংস্করণের মেইল সেবায় ব্যবহারকারীর মেইল স্ক্যান করে নির্দিষ্ট বিজ্ঞাপন দিচ্ছে ইয়াহু। এর ফলে প্রতিষ্ঠানের আয় বেড়েছে। এ ছাড়াও ইয়াহুর অলাভজনক সাতটি সেবা বন্ধ করে দেওয়ার ঘোষণা দিয়েছেন মারিসা মায়ার। ব্ল্যাকবেরির মোবাইলের জন্য ইয়াহু অ্যাপ্লিকেশন, ইয়াহু অ্যাপ সার্চ, ইয়াহু স্পোর্টস আইকিউ, ইয়াহু ক্লুজ, মেসেজ বোর্ডস ওয়েবসাইট, ইয়াহু আপডেটস এপিআইসহ অলাভজনক সেবাগুলো বন্ধ করে অর্থ সাশ্রয় নীতি নিয়েছেন মারিসা।

মারিসার নতুনত্বের পরিকল্পনায় ইয়াহুতে যুক্ত হয়েছে যুক্তরাজ্যের ১৭ বছর বয়সী অ্যাপ নির্মাতা নিক ডি’আলোইসিও। নিকের তৈরি এ ‘সামলি’ অ্যাপ্লিকেশনটি কিনেছেন তিনি। কোটি ডলারে ব্লগিং প্ল্যাটফর্ম টাম্বলার কেনা ছাড়াও চলচ্চিত্র নির্মাণে ব্যবহূত কিউইকি অ্যাপ্লিকেশনের মতো জনপ্রিয় বেশ কিছু সেবা কিনে নিয়ে দূরদর্শিতার পরিচয় দিয়েছেন মারিসা। প্রযুক্তি বিশ্লেষকেরা বলছেন, দূরদর্শী মারিসা ইয়াহুকে যেভাবে বদলে দিয়েছেন তিনি প্রতিষ্ঠানটিকে কোথায় নিয়ে যাবেন তা এখন শুধু দেখার পালা।
মাত্র এক বছরে তিনি প্রথম ধাপটি সম্পন্ন করেছেন বলে জানান মারিসা। তাঁর এ প্রথম ধাপটি ছিল ইয়াহুতে কর্মীদের নৈতিকতা ও আত্মবিশ্বাসের পালে হাওয়া লাগানো।