৫৫ বছর পর কোনো নারী পদার্থবিজ্ঞানী নোবেল পুরস্কার পেলেন

(মামুন আল করিম) এ বছর যে তিন পদার্থবিজ্ঞানীকে যৌথভাবে নোবেল পুরস্কার বিজয়ী ঘোষণা করা হয়েছে, তাঁদের একজন ডোনা স্ট্রিকল্যান্ড। এর মধ্য দিয়ে ৫৫ বছর পর প্রথম কোনো নারী পদার্থবিজ্ঞানী নোবেল পুরস্কার পেলেন।

ডোনা স্ট্রিকল্যান্ড নামের ওই কানাডীয় বিজ্ঞানী এযাবৎ পদার্থবিদ্যায় নোবেল পাওয়া তৃতীয় নারী। কানাডার ওয়াটারলু বিশ্ববিদ্যালয়ের লেজারবিজ্ঞানী ডোনা স্ট্রিকল্যান্ড এর আগে প্রথম নারী হিসেবে পদার্থবিজ্ঞানে নোবেল পুরস্কার পেয়েছিলেন মাদাম মেরি কুরি। ১৯০৩ সালে তিনি নোবেল পুরস্কার পান। এরপর মাঝখানে ৬০ বছরের বিরতির পর ১৯৬৩ সালে পদার্থে নোবেল পান মারিয়া গোয়েপার্ট মায়ের নামের আরেক নারী বিজ্ঞানী। আর এবার তৃতীয় নারী হিসেবে পদার্থে নোবেল পেলেন স্ট্রিকল্যান্ড।

লেজার নিয়ে গবেষণায় যুগান্তকারী উদ্ভাবনের জন্য পদার্থে নোবেল পান মার্কিন বিজ্ঞানী আর্থার অ্যাশকিন, ফরাসি বিজ্ঞানী জেরার্ড মৌরৌ ও কানাডীয় বিজ্ঞানী ডোনা স্ট্রিকল্যান্ড। রয়্যাল সুইডিশ একাডেমি অব সায়েন্সেস সম্প্রতি তাঁদের নাম ঘোষণা করে। তাঁরা তিনজন মিলে বৈজ্ঞানিক গবেষণা ও সার্জারিতে লেজার ব্যবহারের নতুন উপায় আবিষ্কার করেছেন। আগামী ১০ ডিসেম্বর সুইডেনের রাজধানী স্টকহোমে আনুষ্ঠানিকভাবে তাঁদের হাতে পুরস্কার তুলে দেওয়া হবে।

তিন বিজ্ঞানী যৌথভাবে নোবেল পুরস্কারের অর্থ ৯০ লাখ সুইডিশ ক্রোনার (প্রায় ১০ লাখ ১০ হাজার মার্কিন ডলার) ভাগ করে নেবেন। অপটিক্যাল টুইজার্স হিসেবে একটি লেজার কৌশল উন্নত করেছেন অ্যাশকিন, যা জৈবিক পদ্ধতি গবেষণায় ব্যবহৃত হয়। মৌরৌ ও স্ট্রিকল্যান্ড উচ্চ তীব্রতা সৃষ্টি এবং খুব দ্রুত লেজার পালসের প্রক্রিয়া উন্নত করেছেন। অস্ত্রোপচারের জন্য ব্যবহৃত লেজারের ক্ষেত্রে এবং বৈজ্ঞানিক গবেষণায় সাফল্য দেখানোয় নোবেল কমিটি তিনজনকে এই পুরস্কারে ভূষিত করেছে।

সফল ও অনন্যসাধারণ গবেষণা, উদ্ভাবন ও মানবকল্যাণমূলক কর্মকাণ্ডের জন্য সেই ১৯০১ সাল থেকে নোবেল পুরস্কার দিয়ে আসা হচ্ছে। এটিকে বলা হয় বিশ্বের সবচেয়ে সম্মানজনক পুরস্কার। এই পুরস্কারের পরিসংখ্যান বলছে, নোবেল লরিয়েট বা নোবেলজয়ী নারীর সংখ্যা এই পুরুষতান্ত্রিক বিশ্বে নেহাত নগণ্য, যা প্রতি ২০ জনে ১ জন।

পরিসংখ্যান অনুযায়ী, ১৯০১ থেকে ১৯২০ সালে মাত্র ৪ জন নারী নোবেল পান। ১৯২১-৪০ এবং ১৯৪১-৬০ সালে যথাক্রমে ৫ ও ৩ জন নারী নোবেল পুরস্কার পান। এরপর ১৯৬১ থেকে ১৯৮০ সালে ৭ নারী এবং ১৯৮১ থেকে ২০০০ সালে ১১ জন নারী নোবেল পুরস্কার অর্জন করেন। আর ২০০১ থেকে ২০১৭ সালে মোট ১৯ নারী বিশ্বের সবচেয়ে সম্মানজনক এই পুরস্কার পেয়েছেন। নোবেল পাওয়া প্রতিষ্ঠানগুলোকে বাদ দিলে দেখা যায়, ১৯০১ থেকে ১৯১৭ সাল পর্যন্ত সময়ে যেখানে ৮৯৬ জন নোবেল পুরস্কার পেয়েছেন, তার মধ্যে মাত্র ৪৮ জন নারী। তাঁদের মধ্যে মেরি কুরি দুবার নোবেল পান।