ইন্টারনেট ফর এফরিওয়ান : নাভিদ উল হক

(প্রযুক্তি প্রতিদিন) ইন্টারনেট সোসাইটির এশিয়া প্যাসিফিক অঞ্চলের চ্যাপ্টার ডেভেলপমেন্ট ম্যানেজার নাভিদ উল হক সম্প্রতি ঢাকায় এসেছিলেন। ইন্টারনেট সোসাইটির বিভিন্ন বিষয় নিয়ে নাভিদ কথা বলেছেন প্রযুক্তি প্রতিদিনের সাথে।

ইন্টারনেট সোসাইটির কার্যক্রম কি?
নাভিদ জানান, দীর্ঘ ২২ বছর ধরে বিশ্বব্যাপী ইন্টারনেট সেবা ছড়িয়ে দিতে অগ্রণী ভূমিকা পালন করছে ইন্টারনেট সোসাইটি। আমাদের মূল লক্ষ্য হলো সবার কাছে নিরাপদ ইন্টারনেট পৌঁছে দেয়া। ১৯৯২ সালে ইন্টারনেট সোসাইটি যাত্রা শুরু করে। ১৯৮৮ সালে বিশ্বব্যাপী মোট জনসংখ্যার মাত্র ৪ শতাংশ মানুষ ইন্টারনেটের আওতায় ছিল। আর বর্তমানে বিশ্বের প্রায় এক-তৃতীয়াংশ জনগণ ইন্টারনেটের আওতায় এসেছে। এর পেছনে ইন্টারনেট সোসাইটির অনেক অবদান রয়েছে।

ইন্টারনেট সোসাইটির কি ধরনের সেবা দিয়ে থাকে?
ইন্টারনেটের ব্যবহার, নতুন প্রযুক্তি উদ্ভাবন ও এর উন্নয়নে সহায়তা করছে ইন্টারনেট সোসাইটি। ২০০৩ সালে ইন্টারনেট সোসাইটি ডট অর্গ নিবন্ধনের নিলাম জিতে নেয় এবং পাবলিক ইন্টাররেস্ট রেজিস্ট্রি (পিআইআর) নামে একটি স্বতন্ত্র সেবাদাতা প্রতিষ্ঠান চালু করে। এটা ইন্টারনেট সোসাইটিকে এক অনন্য উচ্চতায় নিয়ে যায়। বর্তমানে ইন্টারনেট সোসাইটি বিশ্বব্যাপী ছড়িয়ে গেছে। ১১০টি চ্যাপ্টার, ৬০ হাজার সদস্য, ১৫২টি সংগঠন ইন্টারনেট সংশ্লিষ্ট বিভিন্ন সংগঠনের সাথে কাজ করে যাচ্ছে। এর মধ্যে একটি হলো অ্যাপনিক। যারা মূলত ইন্টারনেট নেটওয়ার্ক নিয়ে বিভিন্ন গবেষণা করেন। বর্তমানে অ্যাপনিক আইপিভি৬ নিয়ে বেশি কাজ করছে। আইপিভি৬ নেটওয়ার্ক ইনফ্রাস্ট্রাকচারের কাজও অ্যাপনিক করছে। রুট সার্ভার ডেপ্লয়মেন্ট অ্যাপনিকের অন্যতম কাজ। ইন্টারনেট অপারেশন সহজ করার জন্য বিভিন্ন দেশে রুট সার্ভার দেয়া হয়। বর্তমানে রুট সার্ভার ঢাকাতেও রয়েছে। এর ফলে ইন্টারনেট স্পিড বৃদ্ধি পাচ্ছে। আগে আমরা যখন ব্রাউজ করি তখন আমেরিকার রুট সার্ভার ব্যবহার করতাম। আর বর্তমানে দেশের রুট সার্ভার ব্যবহারের ফলে ডাটা প্রসেসিং সহজ হওয়ায় গ্রাহক অনলাইনে দ্রæত সব কিছু করতে পারছে।
আইপিভি৬ ব্যবহার সম্পর্কে জনসচেতনা বৃদ্ধির পাশাপাশি বিভিন্ন প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করছে ইন্টারনেট সোসাইটি। আইপিভি৬ হলো ভবিষ্যতের ইন্টারনেট। কারণ আমরা এখন ইন্টারনেট ব্যবহার করে শুধু আমাদের ই-মেইল, চ্যাট, ভিডিও শেয়ার, ফেসবুকিংয়ের মতো কাজ করছি। কিন্তু অচিরেই ইন্টারনেটের পরিধি ব্যাপক আকারে বাড়বে। আর তখন আইপিভি৬ বড় সাপোর্ট দেবে। ভবিষ্যতে আমরা আমাদের ঘরের প্রতিটি পণ্যকেই ইন্টারনেটে কানেক্ট করে বিভিন্ন সেবা নিতে চাইব। তখন কিছু সমস্যা দেখা দেবে। আর এ সমস্যা থেকে পরিত্রাণ পেতে কাজ করবে আইপিভি৬। এখন আমাদের হাতের মুঠোয় থাকা স্মার্টফোনটিতে যেমন সব কিছুই করা যাচ্ছে আগামী দিনে আমাদের ঘরও পরিণত হবে স্মার্টহোমে। তখন আমরা ঘরের বাইরে বসেই ঘরের সব পণ্যকে আপডেট রাখতে পারব ইন্টারনেটের কল্যাণে। আমাদের ঘর, গাড়ি, টিভি, ফ্রিজকে অনলাইনে কানেক্ট করতে যে ধরনের প্রোটোকল লেবেল সাপোর্ট প্রয়োজন সেটাই হলো আইপিভি৬।

বাংলাদেশের প্রত্যন্ত অঞ্চলের মানুষের কাছে ইন্টারনেট প্রসারের লক্ষ্যে ইন্টারনেট সোসাইটির কি কি পরিকল্পনা রয়েছে?
ইন্টারনেট ফর এফরিওয়ান স্লোগান নিয়ে কাজ করছে ইন্টারনেট সোসাইটি। আমাদের মূল লক্ষ্য শহরের পাশাপাশি প্রত্যন্ত অঞ্চলে দ্রæত ইন্টারনেট সেবা পৌছে দেওয়া। এজন্য আমরা বাংলাদেশের সব যায়গায় দ্রæত ব্রডব্যান্ড সেবা পৌছে দেওয়ার ব্যাপারে সরকারি ও বেসরকারি সংস্থা গুলোর সাথে আলোচনা করছি। এছাড়া বর্তমানে বাংলাদেশে ওয়াইম্যাক্স ও থ্রিজির ব্যাপক প্রসার লক্ষ্য করা যাচ্ছে। এতে করেই অচিরেই সবার হাতে ইন্টারনেট সেবা পৌছে যাবে। বাংলাদেশের মানুষকে ইন্টারনেটের ব্যাপারে আগ্রহী করে তুলতে আমরা বিভিন্ন কর্মশালার আয়োজন করছি। এর মধ্যে আইপিভি৬ নিয়ে অনেকগুলো টেকনিক্যাল সেশন ইতোমধ্যে অনুষ্ঠিত হয়েছে। এছাড়াও শিক্ষার্থীদের মাঝে সচেতনতা বৃদ্ধির জন্য অচিরেই বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয় পর্যায়ে কিছু কর্মশালার আয়োজন করা হবে। আর প্রত্যন্ত অঞ্চলের মানুষদের জন্য আমরা বাংলায় বিভিন্ন কনটেন্ট প্রদানের চিন্তা ভাবনা করছি।

অনলাইনে নিরাপত্তার বিষয়টিতে ইন্টারনেট সোসাইটির কোন ভূমিকা আছে কি?
বর্তমানে আমরা বিভিন্ন দেশের সরকারি ও বেসরকারি ষ্টেকহোল্ডারদের সাথে কাজ করছি। আমরা বেশি জোর দিচ্ছে ইন্টারনেট সম্পর্কে সচেতনতা বৃদ্ধিও লক্ষ্যে। বর্তমানে আমরা বিভিন্ন দেশে স্প্যাম এর উপর কর্মশালার আয়োজন করছি। এর মাধ্যমে আগামীর ইন্টারনেট সম্পর্কে তরূন প্রজন্ম সচেতন হতে পারছে।